লেখা: মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল
বাংলাদেশের সংবিধান স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রণীত হয় এবং সময়ের সাথে সাথে এটি বিভিন্ন সংশোধনীর মধ্য দিয়ে গিয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সংশোধন নয়, বরং একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নই হতে পারে স্থায়ী সমাধান। নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রাসঙ্গিকতা, সমস্যা, এবং সম্ভাব্য কাঠামো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা:
১. অতীতের ত্রুটিগুলোর সংশোধন:
• বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে একাধিক সংশোধনী এসেছে, যার অনেকগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। এটি সংবিধানের মৌলিক চেতনায় আঘাত করেছে।
• সংবিধানের বিভিন্ন ধারা এমনভাবে পরিবর্তিত হয়েছে যা ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থ রক্ষা করেছে, জনগণের নয়।
২. নিরপেক্ষ এবং সকলের গ্রহণযোগ্য কাঠামো:
• বর্তমান সংবিধানে এমন অনেক ধারা আছে যা একপক্ষীয় বা বিতর্কিত। একটি নতুন সংবিধান রাজনৈতিক, ও সামাজিকভাবে নিরপেক্ষ হতে পারে।
৩. ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জনকল্যাণের সমন্বয়:
• বর্তমান সংবিধান ধর্মীয় নীতিমালা এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের মধ্যে ভারসাম্য আনতে ব্যর্থ হয়েছে। নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
৪. সুশাসন প্রতিষ্ঠা:
• বর্তমান সংবিধানের কাঠামো সুশাসন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। নতুন সংবিধান কার্যকর প্রশাসনিক কাঠামো গড়তে পারে।
৫. সবার সমান অধিকার নিশ্চিত:
• নতুন সংবিধান প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, এবং সামাজিক ন্যায়ের নিশ্চয়তা দিতে পারে।
নতুন সংবিধান প্রণয়নে যেসব ধাপ অনুসরণ করা যেতে পারে:
১. স্বাধীন কমিশন গঠন:
• নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করতে হবে, যেখানে সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞ, আলেম-ওলামা, আইনজীবী, এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা থাকবে।
২. জনমত গ্রহণ:
• জনগণের মতামত সংগ্রহ করতে গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। এটি নিশ্চিত করবে যে সংবিধান জনস্বার্থকে প্রতিফলিত করছে।
৩. ধর্মীয় মূল্যবোধের সন্নিবেশ:
• নতুন সংবিধানে ধর্মীয় মূল্যবোধের সন্নিবেশ থাকতে হবে। এক আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৪. জবাবদিহিতা এবং সুশাসনের কাঠামো:
• বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, এবং নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
• দুর্নীতিবিরোধী কঠোর নীতিমালা সংযোজন করা উচিত।
৫. পরিবেশ সংরক্ষণ:
• পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ধারা সংযোজন করতে হবে।
নতুন সংবিধানের কাঠামো:
১. মূলনীতি:
• রাষ্ট্র পরিচালনায় এক আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস, রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামের স্বীকৃতি, ন্যায্যতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, এবং জনকল্যাণ হবে মূল ভিত্তি।
২. নাগরিক অধিকার:
• প্রতিটি নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা তথা freedom of speech যেন কারো প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে না পারে সেদিকে খেয়াল রেখে বিধান রাখতে হবে।
৩. ধর্মীয় স্বাধীনতা:
• ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় রেখে এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে যা সবাইকে নিজ নিজ ধর্ম প্রচার, প্রসারের সুযোগ নিশ্চিত করে।
৪. নির্বাচনী ব্যবস্থা:
• একটি স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের আওতায় নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।
৫. জবাবদিহিতা ও বিচারব্যবস্থা:
• বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সাংবিধানিক সুরক্ষা দিতে হবে।
লেখক: ছাত্র, আইন বিভাগ, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
প্রেসিডেন্ট, লাইট অব ইয়াসরব-লয়
Comments
Post a Comment